ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ , ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুগন্ধীর উৎস আগর গাছ চাষ করে সফল বন বিভাগ

​তরল সোনা চাষে সফলতা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০৩:৪৪:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০৩:৪৯:১৮ অপরাহ্ন
​তরল সোনা চাষে সফলতা ফাইল ছবি
সুগন্ধী উৎপাদনকারী ‘আগর’ গাছ চাষ করে সফল হয়েছেন জেলার বন বিভাগের কর্মকর্তারা। বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের বিরামপুরে আগর চাষ করে সফল হন তারা। পাঁচ বছর আগে গাছগুলো রোপণ করা হয়। এখন গাছগুলো দৃশ্যমান। 

দিনাজপুর বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, জেলার বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কালিশহর শালবন এলাকায় ৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আগর গাছ চাষ করা হচ্ছে। আগর কাঠ থেকে পারফিউম, তেল, আতর, সুগন্ধি, আগরবাতি ও ওষুধ তৈরি হয়। এর অবশিষ্টাংশ  জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সুগন্ধি ছড়ানো আগরকে অনেকেই তরল সোনা হিসেবেও বিবেচনা করেন । তিনি বলেন, পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে, পতিত জমি ও টিলা এই আগর গাছ লাগানোর উপযোগী ।  তবে গাছটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই গাছটি বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত অনেক পরিচর্যার  প্রয়োজন হয়। 

সরেজমিনে  জেলার বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কালিশহর শাল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শাখাপ্রশাখা বিহীন সোজা লম্বা দেখতে গাছটি। আকার আকৃতিতে অনেকটা শাল বা গজারি গাছের মতো। এ গাছে সাদা রঙের ফুল এবং ফল ক্যাপসুল আকৃতির হয়। আগর গাছের পাতা দেখতে অনেকটা লিচু বা বকুল গাছের পাতার মতো। 

জেলার বিরামপুর উপজেলার চরকাই ফরেষ্টের রেঞ্জার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আগর গাছ পরিপূর্ণ বয়সে শুকিয়ে যায়। সেসময় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ফুট উচ্চতা হয়। ওই সময় গাছটি কেটে ছোট ছোট টুকরা করে তা কিছু দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর কারখানায় বিশেষ ভাবে নির্মিত চুল্লিতে রেখে তাপ দেওয়া হয়। তাপ দেওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় আগর থেকে আগর অয়েল পাওয়া যায়। যা পরবর্তী সময় আতরসহ সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে গাছের টুকরো থেকে বিশুদ্ধ আগর পাওয়া যায়। বন বিভাগের চরকাই রেঞ্জে কর্মরত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই অঞ্চলে আগর গাছ সৃজন করা একটি পরীক্ষা মূলক কাজ। মহা-মূল্যবান এই আগর গাছে ফুল আসে বর্ষা মৌসুমে এবং ফল আসে তার ৩ মাস পরে।

বন বিভাগের চরকাই রেঞ্জে কর্মরত ফরেস্টার জিয়াউল হক জানান, বালি ভর্তি প্যাকেটে আগর বীজ বপন করে চারা জন্মানো হয়। আগর কাঠ সংগ্রহ করতে প্রায় ৩০ বছর বা আরো বেশী সময় লাগে। তবে কৃত্রিম উপায়ে ১০ বছর পরেও কাঠ সংগ্রহের উপযোগী করা হয়। আগরের গাছে আগর সংগ্রহ করার জন্য সারা গাছে লোহার পেরেক ঢুকিয়ে রেখে দেওয়া হয়। এরপর ওই পেরেক মারা আগর গাছের স্থান থেকে সুগন্ধি আতর ও আগর সংগ্রহ করা হয়।  বন বিভাগের রেঞ্জার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত আগরের সবচেয়ে বড় বাজার এখন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এছাড়াও ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপানেও ব্যাপক ভাবে আগর রপ্তানি হয়ে থাকে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাফর ইকবাল জানান, আগর গাছের পুষ্টির জন্য ভার্মি কম্পোস্ট, কেঁচো সার, আইএসপি, এমডিএফ, ইউরিয়া, জিংক সার ব্যবহার করা যেতে পারে।  আগর বাগানে সাধারণত শাক-সবজি ও ডাল জাতীয় ফসল চাষ করা যায়। আবার আদা এবং হলুদ চাষ করা হয়। তাছাড়া সুপারি, কফি, রাবার, এলাচ, পাম গাছসহ অধিকাংশ বনজ গাছ আগর গাছের সাথে মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। তিনি জানান, জেলার বিরামপুর চরকাই রেঞ্জের আওতাধীন কালিশহর শালবাগানের একটি অংশে পাঁচ বছর আগে আগর গাছ লাগানো হয়। সঠিক পরিচর্যায় এখন আগর গাছ দৃশ্যমান হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে আগর বাগান পরিদর্শন করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগর গাছ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট বিভাগের অধ্যাপক ড.মো. আব্দুল বারী বলেন, আগর চাষ সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনাসহ প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিলে এই শিল্পের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। এই অঞ্চলে আগর চাষের মাধ্যমে শ্রমের সুযোগ তৈরি হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে  এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ